কেরানীগঞ্জে মুক্তিপণেও রক্ষা পেল না মাদ্রাসা ছাত্র :ঘাতক গ্রেফতার

কেরানীগঞ্জে মুক্তিপণেও রক্ষা পেল না মাদ্রাসা ছাত্র :ঘাতক গ্রেফতার

ঢাকার কেরানীগঞ্জে মুক্তিপণ পাওয়ার পরও অপহরণকারীরা তাওহীদ ইসলাম (১০) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা করেছে।

এই ঘটনায় অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেন (৩৭) কে গ্রেফতার করেছে ্যাব-১০।

নিহত মাদ্রাসা ছাত্র আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার নাজেরা বিভাগের ছাত্র ছিল।

অপহরণকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেন দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার আলী হোসেনের ছেলে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে অধ্যয়নরত মাদ্রাসাছাত্র মো. তাওহীদ ইসলাম (১০) নিখোঁজ হয়।

পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করতে থাকেন। এক পর্যায় ঐদিন রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফোন করে জানায় যে, সে ভিকটিম তাওহীদকে অপহরণ করেছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে তিন লক্ষ টাকা দাবী করে।

পরবর্তীতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৩৩/৯৫। পরবর্তীতে ভিকটিমের মা তার ছেলেকে উদ্ধারে র‌্যাবের নিকটও অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অপহৃত ভিকটিম’কে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী কেরাণীগঞ্জের পোস্তগোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর মাদরাসা ছাত্র মো. তাওহীদ ইসলামকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপ্টিক ট্যাংকে লাশ গুমের পরও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মো. মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় মুক্তিপনের ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। ভিকটিমের পরিবার ও গ্রেফতারকৃত মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতো। কিছুদিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত মকবুল ভিকটিমের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেছে বলে জানায়। একই এলাকায় বসবাস এবং বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাদে ভিকটিমের পরিবারের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। ভিকটিম তাওহীদের বাবা একজন প্রবাসী। তাওহীদ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করতো।

শিশুটি সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাসা হতে বের হতো এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেতো। গ্রেফতারকৃত মকবুল এর ধারণা ছিল যে, ভিকটিমের বাবা প্রবাসী তাই ভিকটিমকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে। এরই প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত মকবুল অল্পসময়ে অধিক অর্থ লাভের আশায় প্রায় ৬ মাস যাবৎ ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে আসছিল।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারকৃত মকবুল ভিকটিম তাওহীদ মাদ্রাসা থেকে বাড়ী ফেরার পথিমধ্যে ভিকটিমের বাড়ীর রাস্তার পাশে ওৎ পেতে থাকে। এসময় ভিকটিম মাদ্রাসা থেকে আনুমানিক রাত পৌনে নয়টার সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র পূর্ব হতে ওৎ পেতে থাকা গ্রেফতারকৃত মকবুল ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে ঐ এলাকার নিকটস্থ একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার হাত, পা ও মুখ বেধে রাখে।

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত মকবুল পূর্বে ক্রয়কৃত তার মোবাইল কৌশলে ভিকটিমের বাসায় রেখে আসে। গ্রেফতারকৃত মকবুল ভিকটিমের বাসায় রেখে আসা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এসময় মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে ভিকটিমকে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মুখের বাঁধন খুলে গেলে ভিকটিম ডাক-চিৎকার করলে গ্রেফতারকৃত মকবুল ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিম তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং ভিকটিমের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে উক্ত এলাকার নিকটস্থ একটি সেইফটি ট্যাংকের ভিতরে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রেফতারকৃত মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর বাজারে, সেখান থেকে রাজেন্দ্রপুর, তারপর রসুলপুর আসতে বলে এভাবে ভিকটিমের মামাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাতে থাকে। সর্বশেষ একই দিন আনুমানিক সকাল সাড়ে দশটায় ভিকটিমের মামা গ্রেফতারকৃত মকবুলের কথা মত ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের উপরে ৪নং পিলারের গোড়ায় নগদ ৩ লক্ষ টাকা রেখে আসে।

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। হোটেলে অবস্থাকালীন সময় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন